ইউ টার্নে সিরিজে ফিরলো বাংলাদেশ

দ.আফ্রিকা ঃ ১৬২/১০ (৪৬.০ ওভারে) বাংলাদেশ ঃ ১৬৭/৩ (২৮.৪ ওভারে) ফল ঃ বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ীশামীম চৌধুরী :  সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ থেমেছে ১৬০-এ, দ্বিতীয় ম্যাচে দ.আফ্রিকাকে থামিয়েছে ১৬২ তে! প্রথম ম্যাচে ৫৩ বল হাতে রেখে সফরকারীদের ৮ উইকেটে জয় দেখেছে বাংলাদেশ দল, দ্বিতীয় ম্যাচে সেই সফরকারীদের বিপক্ষে বদলার ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে ৭ উইকেটে, ১৩৪ বল হাতে রেখে! সিরিজের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিকদের জয়ে উইনিং শটটি ছিল রুশোর বাউন্ডারি, রুশোকে জবাব দিতে গতকাল  ইমরান তাহিরকে স্কোয়ার লেগের উপর দিয়ে মেরেছেন সৌম্য ছক্কা! একেই বলে ইউটার্ন! এই একটি ইউটার্নে ২০১৭’র চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও যে নিশ্চিত করতে পেরেছে বাংলাদেশ। হোমে টানা ৪র্থ ওয়ানডে সিরিজ জয়ের আবহও হয়েছে তৈরিÑমঞ্চটা এখন চট্টগ্রামে, চোখ এখন ১৫ জুলাই বাংলাদেশের লাকি ভেন্যুতে। শাসন করা তাকেই মানায়, সোহাগ করে যে, বাংলা এই প্রবচনটি যে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ক্ষেত্রে প্রযোজ্যÑ বিসিবি বস সেই কাজটিই করেছিলেন গত পরশু। অনুশীলনের চেয়েও শাসনটা তার কাছে ছিল জরুরি, ক্রিকেটারদের ছন্দে ফেরাতে তার সতর্কবার্তা টনিকের মতো করেছে কাজ। দ.আফ্রিকার বিপক্ষে টি-২০ সিরিজের ২ ম্যাচে হেলায় হেলায় হাতছাড়া করেছে ম্যাচ বাংলাদেশ দল, সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ছন্নছাড়া বাংলাদেশ দলকেই দেখেছে দর্শক। সেই ছন্নছাড়া দলকে ছন্দে ফিরিয়ে আনতে টিম ম্যানেজমেন্টের বাইরে পরামর্শকের ভূমিকায় টেকনিক্যাল কমিটিÑ বাংলাদেশের ক্রিকেটে চার মুরব্বী স্থানীয় ক্রিকেট ব্যক্তির পরামর্শে একাদশে পরিবর্তনকে যদি কেউ হস্তক্ষেপ বলে গন্য করে, তাহলে এমন হস্তক্ষেপও দলের জন্য ভাল। বিসিবি সভাপতির সতর্কবার্তায় আড়মোড়া ভেঙে অন্য এক বাংলাদেশকে ঠিকই দেখেছে দর্শক ম্যাচের শুরু থেকে। ফিল্ডিংয়ে ফিরে পেয়েছে সুনাম। নির্বাচক এবং টিম ম্যানেজমেন্টের উপর হস্তক্ষেপ করে তিন পেস বোলার তত্ত্বে ফিরিয়ে এনে মুস্তাফিজকে দিয়েছে সাহস। ভারতের বিপক্ষে অভিষেক সিরিজে বিশ্বরেকর্ডের (৩ ম্যাচের সিরিজে ১৩ উইকেট)পর দ.আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে উইকেটহীন কাটানোর কষ্ট বয়ে বেড়াতে হয়নি। বাংলাদেশকে সিরিজে ফেরাতে কাটার মাস্টার ফিরেছেন ছন্দে (৩/৩৮)। তার প্রথম স্পেলে ডি কক ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। বাধ্যতামূলক পাওয়ার প্লেতে রানের লাগাম (৩৮/১) টেনে ধরতে পেরেছে বাংলাদেশ সেখানেই। একাদশে ফেরা রুবেল নিজের দ্বিতীয় ওভারে হাশিম আমলার অফ স্ট্যাম্প শূন্যে পাঁচ চক্করে উড়িয়ে প্রোটিয়াদের মনোবলে দিয়েছেন ধাক্কা। সেই ধাক্কা সামাল দিতে পারেনি তারা। ইনিংসের মাঝপথে প্রোটিয়াদের স্বল্প স্কোরে বেঁধে ফেলতে নাসির, মাহামুদুল্লাহরা অধিনায়কের নির্দেশনা পালন করেছেন অক্ষরে অক্ষরে। দ্বিতীয় জুটির ২৯ ছাড়া প্রোটিয়াদের উল্লেখ করার মতো পার্টনারশিপ শেষ ২টিতে, ২২ করে।  বোলার নাসিরে রূপান্তর হওয়া ছেলেটি ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেছেন গতকাল (৮-০-২৬-৩)। ক্যারিয়ারের প্রথম তিন উইকেটের ইনিংসের তিনটিই ব্রেক থ্রু। ইনিংসে নিজের প্রথম বলেই সফল নাসির। প্রকৃত অর্থে অফ স্পিন যাকে বলে, সেই ডেলিভারি দিয়েই সফল তিনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজের ২টি এবং ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে অপ্রতিরোধ্য তিন ইনিংস (৩১, ১৯ ও ৪৫) শেষে রুশো থেমেছেন (৪)। তাকে থামিয়েছেন নাসির দারুণ এক অফ স্পিনে, অফ স্ট্যাম্প ভেঙে দিয়ে! টি-২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচে ম্যাচ উইনিং নট আউট ৭৯ এবং ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে প্রোটিয়াদের স্বস্তির জয়ে অবদান রাখা (৬৩ নট আউট) ডু প্লেসিসকে (৪১) মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে আসতে বাধ্য করেছেন নাসির । প্রথম স্পেলে ৭-০-২৩-২! ৪২ বলের মধ্যে ২৩টিই ডট। দ্বিতীয় স্পেলেও বিফল হননি। ১-০-৫-১, এই স্পেলে তার শিকার অ্যাবট।৪ বছর আগে চট্টগ্রামে তার ২-০-৩-২, এমন বোলিংয়ে হতভম্ব ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৬১তে অল আউট করে হেসেছে বাংলাদেশ। ৪ বছর পর তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে (৭-০-২৭-৩)  ৮ বছর আগে গায়ানার আবহ ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ দল। প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২শ’র নিচে স্কোর এটাই প্রথম দ.আফ্রিকার। এমন একটি দিনে মুস্তাফিজুরের ১০-১-৩৮-৩, রুবেলের ৯-২-৩৪-২ অবদানও কিন্তু কম নয়। জানেন এমন এক ম্যাচে ২৭০ বলের মধ্যে ১৭৫টিই ডট! দ.আফ্রিকাকে ১৬২ তে ফিরিয়েও কিন্তু কিছুক্ষণের জন্য ছিল শংকা। ২শ’র নিচে প্রতিপক্ষদের গুটিয়ে ফেলার পরও অতীতে ৭ ম্যাচ হারের অতীত আছে বাংলাদেশের। যার মধ্যে গতবছর এই মিরপুরে শ্রীলংকাকে ১৮০ তে বেঁধে ১৩ রানে এবং ভারতকে ১০৫ রানে অল আউট করে ৪৭ রানে হার দুঃসহ স্মৃতি হয়ে চোখের সামনে ভেসে উঠেছে কিছুটা সময়। অভিষেকে হ্যাটট্রিকসহ ৬ উইকেটে বিশ্বরেকর্ড করা রাবাদাকে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে যেয়ে তামিমের প্লেড অন (৫) এবং সেই রাবাদার দ্বিতীয় ওভারে শর্ট বলে লিটনের বোল্ড আউটে (১৭) স্কোর শিটের চেহারা যখন ২৪/২, তখন শংকা পিছু নেয়াই যে স্বাভাবিক। তবে রাবাদাকে ফ্লিক শটে ওয়েলকাম বাউন্ডারিতে মাহামুদুল্লাহর ছন্দে ফেরা ইনিংসে পার্টনার সৌম্য’র বড় ইনিংস খেলার সুতীব্র বাসনায় তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১৩৮ বলে ১৩৫ রানের পার্টনারশিপে জয়কে উৎসবমুখর করতে পেরেছে বাংলাদেশ দল। ক্যারিয়ারের ৩য় ফিফটিকে সৌম্য টেনে নিয়েছেন নট আউট ৮৮ পর্যন্ত। ১৩টি চার এবং ১টি ছক্কার মধ্যে মরিস, ডুমিনি এবং ইমরান তাহিরকে পর পর ২ বলে ২টি করে বাউন্ডারি আছে তার। আছে মরিসের নো বলে প্রাপ্ত ফ্রি হিটকে ওয়ান বাউন্স বাউন্ডারি শট! ১২১ তম ওয়ানডে ম্যাচে ১৩তম ফিফটিটি মাহামুদুল্লাহ উদযাপন করেছেন অ্যাবটের শর্ট বলে বাউন্ডারিতে। পরের বলে শর্ট মিড উইকেট দিয়ে বাউন্ডারিতে থেমেছেন রিয়াদ (৫০), তখন জয় থেকে মাত্র ৪ রান দূরে বাংলাদেশ। প্যাডটা খুলতে হয়নি, জয়টা উদযাপনে অপেক্ষা মাত্র ৩ মিনিট। ৮ বছর আগে গায়ানা ফিরে পাওয়া জয়টির মহাত্ম অনেক। কারণ, ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ে সেরা দলগুলোর মধ্যে ১৩৪ বল হাতে রেখে এমন জয়কে যে উপরেই রাখতে হচ্ছে।