প্রধান দুই দলের চালচিত্র হতাশায় ডুবছে বিএনপি

বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে দেশের অর্থনৈতিক রাজধানী বলে অভিহিত করেন অনেকে। ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতেও এই এলাকার গুরুত্ব সমানভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির কর্মকা-ের ওপর নির্ভর করে নগরীর সার্বিক পরিস্থিতি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই দুই প্রধান দলের বন্দরনগরীর রাজনীতির হালচাল কেমন এবং অদূর ভবিষ্যতে তা কোন দিকে গড়াতে পারে এ সব বিষয় তুলে ধরেছেন রফিকুল ইসলাম সেলিম। হতাশায় ডুবছে বিএনপিচট্টগ্রাম মহানগরীতে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থাও এখন খুবই নাজুক। বড় নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, বিরোধে কর্মীরাও বিভক্ত। সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে জুলুম-নির্যাতন আর মামলা-হামলার শিকার হয়ে বিপর্যস্ত দলের নেতাকর্মীরা। ৫ জানুয়ারীর একতরফা নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলনে চট্টগ্রাম অচল হলেও তার সুফল পায়নি বিএনপি। বরং মামলা, হুলিয়া আর জেল-জুলম জুটেছে হাজার হাজার নেতাকর্মীর ভাগ্যে। গেল ৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া টানা তিন মাসের আন্দোলনেও এখানকার তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জীবনবাজি রেখে মাঠে ছিলেন। ফল হিসাবে মামলা আর হুলিয়ার সংখ্যাই শুধু বেড়েছে। কারাবন্দি হতে হয়েছে শত শত নেতাকর্মীকে। একদিনেই তিনশ’ নেতাকর্মীকে কারাবন্দি করে নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টি করেছে সরকার। মামলা হুলিয়া নিয়ে শত শত নেতাকর্মী কারাগারে কিংবা আদালতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের অভিযোগ দলের নেতাদের কাছ থেকে তেমন কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না তারা। নেতাদের কেউ কেউ এসব মজলুম কর্মীদের সাথে দেখাও করছেন না। সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে এই দলটি। এরপরও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দলের পক্ষে আছেন। তারা কখনো মাঠ ছেড়ে যাননি। এই চরম দুঃসময়েও নেতাদের মধ্যে বিরোধ বিভক্তি প্রকট। আন্দোলনের সময়ে চট্টগ্রামের অনেক বড় বড় নেতাকে রাস্তায় দেখা যায়নি। তাদের কেউ ঢাকায় বসে কীভাবে আন্দোলন ভ-ুল করে দেওয়া যায় সে অপকৌশল গ্রহণ করেন। আন্দোলনে সব নেতা এক কাতারে মাঠে নামতে পারলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতো বলেও মনে করেন কর্মীরা। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে বড় নেতাদের প্রতি অবিশ্বাস ও অনাস্থাও প্রকট। নগর বিএনপির সাংগঠনিক কাঠোমোও এখন নড়বড়ে। বিগত ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে ৫ সদস্যের নগর কমিটি গঠন করে দেওয়া হয় কেন্দ্র থেকে। ওই কমিটির সহ-সভাপতি দস্তগীর চৌধুরী মারা গেছেন। এখন ৪ সদস্যের কমিটি দিয়ে চলছে নগর বিএনপি। বেশ কয়েকবার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। কাউন্সিলের মাধ্যমে মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও আবদুল্লাহ আল নোমানের বিরোধে ওই কাউন্সিল প- হয়। সেই থেকে ওই দুই নেতার মধ্যে বিরোধ লেগেই আছে। মেয়র নির্বাচনে দলের প্রার্থী মনজুর আলমের পক্ষে দুই নেতা একসাথে মাঠে নামলেও নির্বাচনের পর ফের তারা দুই মেরুতে। কেন্দ্রীয় নেতা হয়েও আবদুল্লাহ আল নোমান নগরীতে বিএনপির অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। এসব অনুষ্ঠানে নগর বিএনপির কোনো নেতাকে দেখা যায় না। নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেনের সাথেও নগর সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সম্পর্ক শীতল। ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে দুই নেতার অনুসারীদের বিরোধ প্রকাশ পায়। দলের অপর কেন্দ্রীয় নেতা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, গোলাম আকবর খোন্দকার, সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমও নগর বিএনপিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। তাদের অনুসরারীর সংখ্যাও কম নয়। তবে দলের ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খান এখানকার রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে গরহাজির। নেতাকর্মীরাও তাকে খুঁজে পান না। কর্মীদের অভিযোগ দলের সুসময়ে যেসব নেতা শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন দুঃসময়ে তারা এখন নিজেদের আড়ালে রেখেছেন। তৃণমূলের কর্মীরা বলছেন, বিএনপির সাংগঠনিক ভিত অতীতে কখনো তেমন মজবুত ছিল না। এই দলের প্রাণশক্তি হলো কর্মী-সমর্থক তথা জনগণ। নেতারা এককাতারে এসে জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারলে জনতা তাদের পেছনে কাতারবন্দি হবে। আর তখনই গণতন্ত্র মুক্তি পাবে।