ফুকুশিমার দেবদারূ গাছের গঠনে অস্বাভাবিকতাঃ তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব বলে সন্দেহ

২০১১ সালে তোহোকু ভূমিকম্প থেকে সৃষ্ট সুনামি এবং ফুকুশিমা দাইইচি পারমাণবিক চুল্লীর দুর্ঘটনার পর জাপানের রেডিত্তল্যাজিস্টরা আশেপাশের এলাকা গুলোর সম্ভাব্য পরিবর্তনের উপর নজর রাখছেন। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ রেডিওলজিক্যাল সায়েন্স প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ফুকুশিমার দেবদারূ গাছের অস্বাভাবিক গঠন প্রত্যক্ষ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর সম্ভাব্য কারণ হিসেবে বলা হয়েছে ফুকুশিমা তেজস্ক্রিয়তাকে।

অগাষ্টের ২৮ তারিখ সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয় আক্রান্ত অঞ্চলের দেবদারূ গাছ গুলোর সাথে তেজস্ক্রিয়তা মুক্ত পরিবেশে বৃদ্ধি পাওয়া দেবদারূ গাছ গুলোর তুলনা করলে বিস্তর পার্থক্য দেখা যায়। আক্রান্ত অঞ্চলের গাছ গুলোর গঠন প্রণালী অদ্ভুত ধাঁচের, বিশেষ করে দ্বিশাখায় ভাগ হওয়ার বিষয়টি।

প্রতিবছর একটি স্বাভাবিক দেবদারূ গাছ সরাসরি ঊর্ধ্বমুখে বৃদ্ধি পেতে থাকে, সাথে দু’পাশে দু’টি অনুভূমিক শাখা বিস্তার করে। বিজ্ঞানিরা দেখতে পেয়েছেন আক্রান্ত অঞ্চলের গাছ গুলো উপরের দিক থেকে দু’টি ভিন্ন দিকে শাখা বিস্তার করেছে এবং ঊর্ধ্বমুখী বৃদ্ধি ঘটছে না।

ছবিতে বাম দিক থেকে দেখলে ১নং ছবিটি স্বাভাবিক বৃদ্ধির নিদর্শন। উল্লম্ব ভাবে মাঝখান থেকে একটি শাখা বেরিয়ে গেছে। ২নং ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে গাছের কান্ডটি পুরো দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে এবং ৩নং ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে কেবলমাত্র আনুভূমিক বৃদ্ধি ঘটছে। সেখানে কোনো উল্লম্ব বৃদ্ধি ঘটছে না। লাল তীর চিহ্ন দিয়ে দ্বিশাখায় ভাগ হওয়া চিহ্নিত করা হয়েছে। ৩নং ছবিটিতে গাছের মধ্য, উল্লম্ব শাখাটি ঊর্ধ্বমুখী প্রবৃদ্ধি সম্পূর্ণ হারিয়ে গেছে।

এ বছরের জানুয়ারিতে ফুকুশিমা’র ওকুমা (দুর্ঘটনাগ্রস্ত পারমাণবিক প্ল্যান্ট থেকে ৩.৫ কিলোমিটার দূরে), নামিয়ে’র দু’টি স্থানে (দুর্ঘটনাগ্রস্ত পারমাণবিক প্ল্যান্ট থেকে ৮.৫ ও ১৫ কিলোমিটার দূরে) তদন্ত পরিচালনা করা হয়। ওকুমা’তে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা ছিলো ৩৩.৯ মাইক্রোসিভার্ট এবং নামিয়ে’র দু’টি স্থানে ছিলো যথাক্রমে ১৯.৬ ও ৬.৮৫ মাইক্রোসিভার্ট। স্বাভাবিক বৃদ্ধিপ্রাপ্ত যে গাছ গুলোর সাথে তুলনা করা হয় সেগুলো হচ্ছে প্রতিবেশী ইবারাকি প্রিফেকচারে অবস্থিত যেখানে তেজক্রিয়তার মাত্রা ০.১৩ মাইক্রোসিভার্ট।

প্রতি অঞ্চলের ১০০ থেকে ২০০টি গাছ পরীক্ষা করা হয়। ওকুমা’র ৯০ শতাংশ গাছে কোনো না কোনো অস্বাভাবিকতা রয়েছে। একটু দূরে যেখানে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা কিছুটা কম নামিয়ে’র দু’টি অঞ্চলে ৪০ শতাংশ ও ৩০ শতাংশ গাছে অস্বাভাবিকতা চিহ্নিত করা হয়, অপর দিকে ইবারাকি প্রিফেকচারে মাত্র ১০ শতাংশ গাছে এ ধরনের অস্বাভাবিকতা দেখা গেছে।

“অঙ্গ গঠন” পরিবর্তনের ঘটন সংখ্যা এবং ফুকুশিমা দাইইচি পারমাণবিক চুল্লীর নৈকট্য বা তেজস্ক্রিয়তার মাত্রার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ইঙ্গিত করছে যে তেজস্ক্রিয়তার সাথে গাছের গঠনের সম্পর্ক রয়েছে কিন্তু তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি।

তবে, প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় এ ধরনের সুনির্দিষ্ট অংগ গঠন পরিবর্তনের ঘটনা অন্যান্য স্থানেও দেখা গেছে এবং অন্যান্য প্রভাবক ও কীটপতঙ্গতে ক্ষতিকে এর আওতার ভেতরও অন্তর্ভুক্ত করা চলে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এই পরিবর্তনকে পারমাণবিক দুর্ঘটনার সাথে সরাসরি সম্পর্ক যুক্ত না করে বরং এই পরিবর্তন বেশি ঘটার ক্ষেত্রে তেজস্ক্রিয়তা অধিক ভূমিকা রেখে থাকে -গবেষকরা সেটাই প্রমান করতে চেয়েছেন।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ রেডিওলজিক্যাল সায়েন্স এর উচ্চ তেজস্ক্রিয় অঞ্চলে দেবদারূ গাছের অঙ্গ গঠন পরিবর্তনের উপর প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে।