বিরল রেকর্ড মুস্তাফিজের বৃষ্টি কেড়ে নিল বাংলাদেশের স্বপ্ন

চতুর্থ দিনেই তৈরি হয়েছিল চিত্রনাট্য, প্রথম তিন দিন দারুণ কিছুর সম্ভাবনা দেখানো ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ৭৮ এবং তৃতীয় দিন শেষে ১৭ রানে বাংলাদেশের লিডের পরও যে বেরসিক বৃষ্টি বাধিয়েছে বাগড়া। এমন সম্ভাবনা দেখানো ম্যাচের  পরিণতি যে ধাবিত হচ্ছে ড্র-এ। চতুর্থ দিনের পুরোটা খেলাহীন কেটে যাওয়ায় সে পূর্বাভাসই দিয়েছিল চট্টগ্রাম টেস্টে। ম্যাচের চতুর্থ দিনে গড়ায়নি একটিও বল, পঞ্চম দিনের কাহিনীও এক। চতুর্থ দিনের খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে হয়েছে ম্যাচ রেফারী ক্রিস ব্রডকে দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে, পীচ কাভার খোলা যেখানে সম্ভব হচ্ছে না, সেখানে দেরি করে লাভ কি? কাঁটায় কাঁটায় দুপুর ১২টায় তাই ৫ম দিনের খেলা পরিত্যক্ত ঘোষিত হওয়ায় ড্র-এ নিষ্পত্তি হলো চট্টগ্রাম টেস্ট। লাকি ভেন্যু জহুর আহমেদ চৌধুরী  স্টেডিয়ামে টানা ৪টি টেস্টের একটিতেও ব্যর্থ হতে হয়নি। নিউজিল্যান্ড, শ্রীলংকার বিপক্ষে ড্র গর্বের ড্র-এর পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়, সর্বশেষ সাফল্যটি প্রোটিয়াদের বিপক্ষে  ড্র। ৯৩তম টেস্টে ৭ জয়ের পাশে ১৪তম ড্র এটি। বৃষ্টি বিঘিœত টেস্টে ড্র’র এটি ৮ম দৃষ্টান্ত। তবে  এক সময় বৃষ্টি আশীর্বাদ হয়ে হাসাতো বাংলাদেশকে। এখন কাঁদায় বৃষ্টি। ইতোপূর্বে বৃষ্টি বিঘিœত ৭টি টেস্টের মধ্যে কেবল  ২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে কর্তৃত্ব নিয়ে প্রথম ইনিংসে ১০৬ রানের লিডে দারুণ কিছুর সম্ভাবনা ছিল, কিন্তু ম্যাচের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দিন খেলাহীন চট্টগ্রাম টেস্টে বৃষ্টি বাধায় অবশিষ্ট তিন দিনের পুরোটা হয়নি খেলা। চতুর্থ ইনিংসে ২২৬’র চ্যালেঞ্জের মাঝপথেই ড্র’র প্রস্তাব দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৪ বছর পর সেই জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামেই দারুণ কিছুর সম্ভাবনার অপমৃত্যু ডেকে এনেছে বৃষ্টি। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করে নিজেদের সর্বোচ্চ ৭৮ রানের লিড,  মুস্তাফিজুর (৪/৩৭), জুবায়েরের (৩/৫৩) বোলিংয়ে প্রথম দিনেই টেস্টের নাম্বার ওয়ানদের অল আউটে বাধ্য করা ম্যাচে যেখানে তৃতীয় দিন শেষে ১৭ রানের লিডে নাটকীয় কিছুর আভাস, উইকেট থেকে স্পিনাররা যেভাবে পেয়েছে তৃতীয় দিন টার্নÑতাতে সাকিব, তাইজুল, জুবায়ের, মাহামুদুল্লা যখন রাঙাচ্ছে চোখ প্রোটিয়াদের, তখন চট্টগ্রাম টেস্টের সব উত্তেজনাই যে কেড়ে নিল বৃষ্টি! প্রথম তিন দিনে ৫২ ওভার ম্যাচহীন থাকার হিসেবটা শেষ ২ দিনে মেলানোর সুযোগটাও যে দিল না বাংলাদেশকে বৃষ্টি। তবে বাংলাদেশের স্বপ্ন বৃষ্টি কেড়ে নিলেও বৃষ্টি বিঘিœত এই ম্যাচে বিশ্বরেকর্ড কিন্তু দেখেছে বিশ্ব। দুই ভার্সনের ক্রিকেটে অভিষেকে ম্যান অব দ্য ম্যাচের কৃতিত্ব নেই কারো। ওয়ানডে অভিষেকে ভারতের বিপক্ষে ম্যান অব দ্য ম্যাচ মুস্তাফিজুর টেস্ট অভিষেকেও এমন কৃতিত্বে নতুন ইতিহাস করেছেন রচনা। ২ বছর আগে এই ভেন্যু থেকেই সোহাগ গাজীর বিস্ময় অল রাউন্ড দ্যুতিতে দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব বিশ্বরেকর্ড। সেঞ্চুরির পাশে হ্যাটট্রিকসহ ৬ উইকেটের সেই রেকর্ডে এখনো একা সোহাগ গাজী। মুস্তাফিজুরের রেকর্ডটিও এলো সেই ভেন্যু থেকে। তবে ড্রেসিংরুমের সামনে  পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতায় ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার নেয়ার দৃশ্যটি যে দেখতে পারলো না দর্শক। বাংলাদেশের এই ১৯ বছরের তরুণের কৃতিত্বে হাততালিও যে দিতে পারল না কেউ। এমন দৃশ্য দেখার অন্তরায়ও বৃষ্টি ! টেস্ট অভিষেকে ম্যান অব দ্য ম্যাচে এক ভেন্যু থেকে দ্বিতীয় বাংলাদেশীকেও যে দেখালো জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। ২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাঁ হাতি স্পিনার  ইলিয়াস সানির (৬/৯৪) কৃতিত্বের ৪ বছর পর টেস্ট অভিষেকে মুস্তাফিজুর বিস্ময়ে (৪/৩৭) আর একজন অভিষিক্ত ম্যান অব দ্য ম্যাচকে যে দেখল বিশ্ব। বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসে টেস্ট অভিষেকে ৪ কীর্তিমানের ম্যাচ সেরার তালিকায় জাভেদ ওমর বেলিম গুল্লু (২০০১এ বুলাওয়ে টেস্ট) এবং আশরাফুলের (২০০১এ কলোম্বো টেস্ট) পর ইলিয়াস সানি এবং মুস্তাফিজুরের নাম হয়েছে যুক্ত। তবে প্রথম ২ জনের কৃতিত্বের ম্যাচে ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ, শেষ ২ জনের কৃতিত্বপূর্ণ ঘটনায় ড্র’Ñএবং ২টিই আবার বৃষ্টি বিঘিœত ম্যাচে !