ব্রেনকে রাখুন সুস্থ

মানব শরীরের চালিকা শক্তি ব্রেন। সেই ব্রেন সুস্থ না থাকলে বন্ধ হয়ে যাবে আপনার সকল কাজ। তাই আপনার ব্রেনের চাহিদা সম্পর্কে এবার মনোযোগ দিন। আপনার ব্রেনকে সুস্থ-স্বাভাবিক গতিতে চালানোর জন্য কিছু টিপস দিয়েছেন বিবিসি’র ফিচার বিভাগের লেখক ডেভিট রবসন। ইত্তেফাকের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলে তার সেই পরামর্শের অনুবাদ:

আপনার ব্রেনের যোগ্যতা নিয়ে কখনই হতাশ হবেন না

অনেক সময় নিজেদের দক্ষতা সম্পর্কে হতাশায় ভুগী আমরা। কিন্তু বিষয়টা মোটেও পছন্দ করে না আমাদের ব্রেন। সে সর্বদা আত্মবিশ্বাসী থাকতে পছন্দ করে। তাই যত বড় সমস্যাতেই থাকুন, কখনই নিজের উপর বিশ্বাস হারাবেন না। কারণ আপনার ব্রেন সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সর্বদা আপনাকে সাহায্য করবে। নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়না টরন তার এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, বয়স হবার সঙ্গে সঙ্গে নিজ ব্রেনের স্মরণশক্তি সম্পর্কে আত্মবিশ্বাস হারাতে থাকে মানুষ। ফলে ব্রেনও আর মনে রাখারা প্রয়েজন মনে করে না অনেক কিছু! তাই আপনার ব্রেনের উপর ভরসা রাখুন।

আপনার শ্রবণ ইন্দ্রিয়কে রক্ষা করুন

ব্রেন কখনই একা থাকতে পছন্দ করে না। সে সর্বদা তার সঙ্গীদের সহায্য নিয়ে চলে। আর ব্রেনের সঙ্গীরা হলো আপনার ইন্দ্রিয়। তাই কখনই ইন্দ্রিয়দেরকে ব্রেন থেকে পৃথক করবেন না। আর আপনার ব্রেনের সবচাইতে পছন্দের সঙ্গী আপনার শ্রবণ ইন্দ্রিয়। তাই সর্বদা শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের বিশেষ যত্ন নিন। এই ইন্দ্রিয়ের দক্ষতার সঙ্গে জড়িত আপনার ব্রেনের দক্ষতা। গবেষণায় দেখা গেছে, শ্রবণ শক্তি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জ্ঞান ও অনুধাবনের ক্ষমতা হ্রাস পায়।

ভীন্ন ভাষা বা কোন বাদ্যযন্ত্র বাজানো শিখুন

আপনার ব্রেনকে কখনই অলস রাখবেন না। বরং ব্রেনকে ব্যস্ত রাখতে নতুন ভাষা বা বাদ্যযন্ত্র বাজানো শিখুন। এতে বৃদ্ধি পাবে ব্রেনের কর্মক্ষমতা। গবেষণায় দেখা গেছে আমরা আমাদের অনুধাবন ও ইন্দ্রিয়গুলোকে সবচাইতে বেশি ব্যবহার করি নতুন ভাষা বা বাদ্যযন্ত্র শেখার সময়। আর সে কারণেই আপনার ব্রেন হয়ে ওঠে দক্ষ এবং তড়িৎ কার্যক্ষম।

জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলুন

আপনার ব্রেনের জন্য সবচাইতে বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে স্থূলতা। তাই সর্বদা এড়িয়ে চলুন জাঙ্ক ফুড। ব্যস্ত জীবনযাপনের কারণে বর্তমানে আমরা অনেকেই নির্ভর হয়ে যাচ্ছি ফাস্টফুডের ওপর। সেই সঙ্গে অফিসের কলিগ বা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গ ঘরের বাইরে খাবার খেতে গেলে বেছে নিচ্ছি মোরগ পোলাও, তেহরি বা পিৎজা। সেই সঙ্গে রয়েছে আমাদের গ্যাজেটের (মোবাইল-ল্যাপটপ) আসক্তি। ফলে আমরা হয়ে যাচ্ছি স্থূলাকার। কিন্তু আমাদের রক্তনালীতে এমন চর্বি জমা হয়ে রক্তপ্রবাহ কমিয়ে দেয়। ফলে ব্রেনভোগে তার পর্যাপ্ত নিউট্রেশন ও অক্সিজেনের অভাবে। মূলত সে কারণেই স্থূলাকার মানুষ অল্প কাজ করেই হাপিয়ে যান। তাই নিজের দেহ এবং ব্রেনের সুস্থতার জন্য ত্যাগ করুন জাঙ্ক ফুড খাবার অভ্যাস।

নিজের দেহ গঠনে মনোযোগ দিন

দেহ ছাড়া ব্রেন এবং ব্রেন ছাড়া দেহ। এরা একজন আরেকজনকে ছাড়া অসহায়। তাই ব্রেনকে সুস্থ রাখতে অবশ্যই মনোযোগ দিন আপনার দেহ গঠনে। নিয়মিত খেলাধুলা করুন, ব্যায়াম করুন এবং দেহ গঠনের অন্যান্য নিয়মগুলো মেনে চলুন। আপনি দেহ গঠনে মনোযোগ দিলে আপনার দেহের সঙ্গে ব্রেনের সম্পর্কটাও হবে নিবিড়।

নিজেকে ২১ বছর বয়সী তরুণ ভাবুন

কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, বার্ধক্যকে বয়সের ফ্রেমে বেধে রাখা যায় না। সম্প্রতি ব্রিটেনের এক গবেষণায় মিলেছে তার প্রমাণ। সেখানে দেখা গেছে, যারা নিজেদের মনে তারণ্যকে লালন করে, তারা দীর্ঘায়ু লাভ করে। আর তার কারণ, তাদের ব্রেন কখনই অনুভবই করে না যে মৃত্যুর সময় হয়ে গেছে। গবেষণা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ৭০ বছর বয়সী যে সকল মানুষ সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন এবং নিজেদেরকে তরুণদের মতই উচ্ছাসিত রাখেন, তারা বৃদ্ধ বয়সের অনুধাবনগত সমস্যায় কম ভোগেন। এমনকি তাদের ব্রেনও বেশ সক্রিয়তার সঙ্গে কাজ করে। গবেষণাটিতে দেখানো হয় এমন বৃদ্ধরা তার সমবয়সী বাকি বৃদ্ধদের থেকে ৭০ গুন বেশি সুস্থ থাকেন মানসিকভাবে।