লতিফের এমপি পদ বাতিলে ইসিকে আ’লীগের অনুরোধ

আমেরিকার নিউইয়র্কের জ্যাকসনে দেয়া নিজের ধর্ম অবমাননাকর বক্তব্যকে একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে দিয়েছেন উল্লেখ করে ওই বক্তব্যের কারণে দল থেকে বহিষ্কারের এখতিয়ার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেই বলে দাবি করেছেন দল সংসদ সদস্য লতিফ সিদ্দিকী। গতকাল নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেয়া এক চিঠির জবাবে তিনি এই দাবি করেন। একই সাথে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত না হওয়ায় সিইসিকে দেয়া স্পিকারের চিঠি আমলে না নিয়ে তা ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদ না থাকায় সংসদ সদস্য থাকার অধিকার নেই বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। গতকাল দুপুরে একই চিঠির জবাবে দল হিসাবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বহিষ্কার ও বহিষ্কার-পরবর্তী সাংবিধানিক অবস্থান জানানো হয়। এসময় টাঙ্গাইল-৪ আসনকে শূন্য ঘোষণা করতে ইসিকে অনুরোধও জানিয়েছে দলটি। আর ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়েছিলাম তারা নিজেদের অবস্থান ব্যাখা করেছে। এখন পূর্ব নজির অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলের পক্ষে উপদপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস ইসির চিঠির লিখিত জবাব জমা দেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ আর গণপ্রতিনিধিত্ব ৭২ এর ১২(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীকে কোনো নির্বাচিত রাজনৈতিক দলের বা একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্দিষ্ট করা হয়। লতিফ সিদ্দিকী উক্ত ধারা ও অনুচ্ছেদ অনুসারে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। যেহেতু আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ধারা মতে, দলের সকল পদ ও  প্রাথমিক সদস্য পদ থেকেও বহিষ্কৃত হয়েছেন এবং তিনি আওয়ামী লীগের কেউ নন তাই জাতীয় সংসদের পদে থাকার আইনগত অধিকার হারিয়েছেন।তিনি আরো জানান, যেহেতু তিনি (লতিফ সিদ্দিকী) দলের কেউ নন, প্রাথমিক সদস্য পদও নেই এ কারণে ৬৬(৪) ধারা ও জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি অনুসারে লতিফ সিদ্দিকীর টাঙ্গাইল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পদ বাতিলে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।গত ১৩ জুলাই দল ও মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কৃত লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সিইসিকে চিঠি দেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এরপর গত ১৬ জুলাই লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও লতিফ সিদ্দিকীর কাছে চিঠি পাঠানো হয়।এর আগে দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে ব্যক্তিগত সহকারীর মাধ্যমে চিঠির লিখিত জবাব দেন লতিফ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, আমেরিকার নিউইয়র্কে যে বক্তব্যের কারণে আওয়ামী লীগ তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে, তা সম্পূর্ণ বেআইনি। ইসিতে পাঠানো চিঠিতে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে কূটনৈতিক সফরকালে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে বসবাসরত টাঙ্গাইলের অধিবাসীদের সঙ্গে আলাপকালে আমার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার যে কষ্টকল্পিত, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে, তা আলোচনার স্বার্থে যদি ধরে নেওয়া হয় আমি ওই বক্তব্য দিয়েছি, তাহলে আওয়ামী লীগ থেকে সদস্যপদ বাতিল করার এখতিয়ার দলের কেন্দ্রীয় সংসদের নেই। কেননা, আমি বাংলাদেশ সরকারের তথা জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে গিয়েছি এবং একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে উক্ত বক্তব্য দিয়েছি বলে বিবেচনা করার কোনো সুযোগ নেই। অতএব আওয়ামী লীগের সদস্যপদ থেকে আমাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তটাই ভুল ব্যাখার ওপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়েছে।তিনি সংবিধানের ৬৬(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিতর্ক নিষ্পত্তি সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, অতএব, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক বিচার্য বিষয়ের অন্তর্গত নয় বিধায় উক্ত অভিযোগ প্রাথমিক স্তরেই খারিজ হবে।চিঠিতে আরো বলা হয়, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহের কোনো একটি সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদে বর্ণিত সংসদ সদস্যপদ বজায় রাখার ক্ষেত্রে অযোগ্যতার আওতায় পড়ে না কিংবা সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বর্ণিত দুটি কারণসমূহের একটিও আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আমি দল থেকে পদত্যাগও করিনি কিংবা সংসদ অধিবেশন চলাকালীন সময়ে দলের কোনো সিদ্ধান্তের বিপক্ষে ভোটও দেইনি।চিঠিতে বলা হয়, আমার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক আনীত অভিযোগ সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কারণসমূহের মধ্যে পড়ে না বিধায় জাতীয় সংসদের স্পিকার যেমন সংবিধানের ৬৬(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবরে চিঠি প্রেরণ করতে পারেন না, তেমনি সিইসিও এতদসংক্রান্ত কোনোরূপ শুনানি কিংবা নিষ্পত্তি করার কোনো প্রকার আইনি অধিকার সংরক্ষণ করেন না।বিষয়টির গভীরতা ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় রাখতে অনুরোধ করছি। তাই নির্বাচন কমিশন শুনানি বিতর্কে না জড়িয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য জাতীয় সংসদের স্পিকার বরাবর ফেরত পাঠাতে বাধিত হবে।এদিকে দু’পক্ষের জবাবের পরে নিজ কার্যালয়ে ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ বাতিলের বিষয়ে সংবিধান ও আগের নজির অনুসারেই ব্যবস্থা নেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশন চাইলে এ বিষয়ে দু’পক্ষের শুনানিও করতে পারে। তিনি বলেন, লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ থাকবে কি-না তা আইনি বিষয়। সংবিধান, আইন ও পূর্ব নজির অনুসারে কমিশন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কমিশন চাইলে এ বিষয়ে দ’ুপক্ষের মধ্যে শুনানি করতে পারে।তিনি আরো বলেন, ‘আমরা দু’পক্ষকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়েছি। তারা আজকে এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। এখন আমরা তা দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব। প্রসঙ্গত গত ২৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী থাকাকালীন এক অনুষ্ঠানে হজরত মুহাম্মদ (সা.), পবিত্র হজ ও তাবলীগ-জামাত নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন প্রবীণ রাজনীতিক লতিফ সিদ্দিকী। এরপর দেশের ইসলামী দল ও সংগঠনগুলো তার শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করে। পরে তাকে মন্ত্রী পরিষদ, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। এর পরে তাকে কারণ দর্শনোর নোটিশ দিয়ে তার প্রাথমিক সদস্যপদও বাতিল করা হয়। এর পরে প্রায় আট মাস পরে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি স্পিকারের দেয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। সর্বশেষ গত ১৩ জুলাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিনকে চিঠি দেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। ১৬ জুলাই ইসি লতিফ সিদ্দিকীর অবস্থান ও এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেন। একইদিন সিদ্দিকীর বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকেও চিঠি দেয়া হয়। আজ শেষদিনে দু’পক্ষই চিঠির জবাবে নিজ নিজ অবস্থান ব্যাখা করল।